Other names of death blue whale
দেশে নতুন আতঙ্ক ব্লু হোয়েল গেম
*দেশে এ পর্যন্ত ৬১ জনের প্রাণ গেছে, ভারতে এই সংখ্যা ১৩০ *‘এই গেমে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না’
আবুল খায়ের
০৯ অক্টোবর, ২০১৭ ইং ০৫:২৫ মিঃ
এবার বাংলাদেশে নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক মরণঘাতি গেমস ‘ব্লু হোয়েল’। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ১৩০। এর মধ্যে পশ্চিবঙ্গেই মারা গেছে অন্তত ২০ জন। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর এই গেমের বলি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। গত দু’মাস ধরে ভারতজুড়ে চলছে ব্লু হোয়েল আতঙ্ক। ৫০ ধাপের এই খেলায় শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়৷ বরং বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷ আর গেমে প্রবেশ করে তারা বিবেকহীন হয়ে পড়ে। ৩১ ধাপে গিয়ে তাকে নিজের ওপর আঘাতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটা মাদকাসক্তের চেয়ে ভয়ঙ্কর। ভয়ঙ্কর এই গেমের সফটওয়্যার লিঙ্ক ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ব্লু হোয়েল গেমের শিকার হয়েছে রাজধানী ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের এক কিশোরী। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয় তার পড়ার কক্ষ থেকে।
কিশোরীর নাম অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। ছিল তুখোড় মেধাবী। স্কুলের ফার্স্ট গার্ল হিসেবেই পরিচিত ছিল সে। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় ছিল প্রথম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। তার বয়স ছিল মাত্র তেরো। পড়ছিল অষ্টম শ্রেণিতে। হলিক্রস স্কুলে ভর্তির পর থেকে বদলে যেতে থাকে সে। পড়াশোনার জন্য সে ব্যবহার শুরু করে ইন্টারনেট। কয়েক বছর আগে থেকেই এনড্রয়েড মোবাইল ফোনও ব্যবহার শুরু করে স্বর্ণা। ফেসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার চলছিল। এরমধ্যে সবার অজান্তে সে ঢুকে পড়ে ইন্টারনেটের এক নিষিদ্ধ গেমসে। নিহত কিশোরীর পিতার সন্দেহ, তার আদরের মেয়ে ঢুকে পড়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক ডেথ গেমস ব্লু হোয়েলে। বুধবার দিবাগত শেষ রাতে সে নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরদিন বৃহস্পতিবার ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় নিউ মার্কেট থানাধীন সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসা ৫বি ফ্ল্যাট থেকে। ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকূটও উদ্ধার করা হয়। তা এখন পুলিশের হাতে। তাতে বড় করে লেখা, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়।’ লেখা শেষে গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্ন আঁঁকা।
মনোবিজ্ঞানিদের তথ্য মতে উক্ত ছাত্রীসহ অনন্ত অন্তত ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ১৩০ বলে জানা গেছে। নিজ দেশ রাশিয়াতে এর শিকার হয়ে ১৮১ জন আত্মঘাতী হয়েছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। বাংলাদেশের আইনে যদি এই অপরাধের জন্য উদ্ভাবকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ থাকে আমি মামলা করব। এই গেমে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। তাই আমি অনুরোধ কেউ যেন কৌতূহলের বশেও এই গেমসে না ঢুকে।
ব্লু হোয়েল’র ৫০তম চ্যালেঞ্জ অর্থাত্ সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা
বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার পথ দেখাচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’। এটি সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন কিংবা নিছক গেম নয়। এটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক একটি ডিপওয়ে গেম। যেসব কম বয়সী ছেলে-মেয়ে হতাশায় ভোগে তারাই সাধারণত আসক্ত হয়ে পড়ে এ গেমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো ক্লান্তি বা বিষন্নতা দূর করার গেম নয়। আত্মহত্যার প্রবেশ পথ মাত্র। ভারতে ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে আত্মঘাতী কয়েক তরুণের সুইসাইডাল নোটে লেখা হয়েছে, ‘ব্লু হোয়েলে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না’। জানা গেছে, এই গেমে ৫০টি ধাপ রয়েছে। প্রথম দিকে একই গেমের কিছু সহজ কাজ থাকে। এক বা একাধিক কিউরেটর দ্বারা চালিত হয় এই গেম। কিউরেটরদের নির্দেশেই গেমের এক একটি নিয়ম মেনে চলতে থাকে অংশ গ্রহণকারীরা। নিয়ম অনুযায়ী একবার এই গেম খেললে বেরুনো যায় না। কেউ বেরুতে চাইলেও তাদের চাপে রাখতে পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয় বলে আলোচনা আছে। এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁঁকা, সারা গায়ে আঁঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনো ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি। চ্যালেঞ্জ নেয়ার পর এসব ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁঁকতে হয়। একবার এই গেম খেললে কিউরেটরের সব নির্দেশই মানা বাধ্যতামূলক। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। এই চ্যালেঞ্জ নিলে গেমের সমাপ্তি।
২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ঐ মরণ খেলা৷ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে৷ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে৷ যেন আত্মহত্যার জন্যই৷
No comments